প্রকাশ :
২৪খবরবিডি: 'সফর শেষে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ দিয়ে ঢাকা ছেড়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তার এ সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে চারটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। ঘোষণা এসেছে, চীনের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ৯৯ শতাংশ পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার ও আটকে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য দুই-এক দিনের মধ্যে ভিসা ব্যবস্থার।'
'রোহিঙ্গা সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে চীন কাজ করে যাবে জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। চীন বলেছে, সে দেশের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ দূর করার চেষ্টা করছে। সেটা শুধু বাংলাদেশ নয়, অনেকেরই সমস্যা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে চীন অব্যাহতভাবে কাজ করে যাবে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, অনেক দিন হয়ে গেল। আমাদের দুর্ভোগের মাত্রা বেড়েছে। তা শুধু স্থানীয় জনগোষ্ঠীই নয়; শিবিরে মাদক ও অস্ত্র পাচার বেড়েছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রচ- ঝুঁঁকি নিয়ে কাজ করছে। সেখানকার ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতি আমাদের অবশ্যই থামাতে হবে। আগে বলেছিলাম, তারা এসেছে আমরা রেখেছি। এখন তো অনেক সমস্যা। তা ব্যাখ্যা করেছি। আমরা আশা করব, তিনি আরও ভালোভাবে জেনে দেশে ফিরে গিয়ে ব্যবস্থা নেবেন। শাহরিয়ার আলম বলেন, আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই, চীনে যাত্রা বন্ধ থাকায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী দেশে অপেক্ষায় ছিলেন। আমরা তাদের সঙ্গে অব্যাহত যোগাযোগের মধ্যে ছিলাম। দু-এক দিনের মধ্যে চীনে ফেরত যেতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ভিসা দেওয়া শুরু হবে।
-বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে তাইওয়ান ইস্যুতে চীন তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, চীন পৃথিবীর সব রাষ্ট্রের জন্য একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে যৌথ সহযোগিতা চায়। এ উদ্যোগে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলোচনায় উল্লেখ করেছেন, কিছু রাষ্ট্র আছে, যারা ভুল বোঝে বা চীনকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে। ওই বিষয়ে কিছুটা কথা হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্টের সম্প্রতি ঘোষিত গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) এবং গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভের (জিএসআই) মতো উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, অবশ্যই এ ব্যাপারে (তাইওয়ান, জিডিআই ও জিএসআই) বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তারা তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। এটা আমাদের আলোচনার বিষয় নয়। আমাদের অগ্রাধিকারে আরও অন্যান্য বিষয় আছে। তবে 'এক চীন' নীতি নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের জন্য তারা ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আমরা আমাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছি বলে তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এশিয়া একসঙ্গে কাজ করতে পারে- প্রধানমন্ত্রী : চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চীন একসঙ্গে কাজ করতে পারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা-অবরোধ ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা-অবরোধের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব কারণে সারা বিশ্বের মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চীন একসঙ্গে কাজ করতে পারে। বৈঠককালে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার দেশ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে সমর্থন দেবে এবং একটি কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
ঢাকা-বেইজিং চার চুক্তি সমঝোতা, চীন-আমেরিকা ব্যস্ত ঢাকায়
'বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এই সংকট নিরসনে বাংলাদেশ চীনের সহযোগিতা চায়। চীনা মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হবে। তিনি আরও বলেন, তৃতীয় পক্ষের সম্পৃক্ততার প্রয়োজন হলে চীন তার ভূমিকা পালন করবে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়নেও চীন বাংলাদেশকে সাহায্য করবে। ওয়াং ই প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাইওয়ান ইস্যুতে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
-এ সময় শেখ হাসিনা বাংলাদেশ 'এক চীন নীতিতে' বিশ্বাসী এ কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে তার বন্ধুত্বকে মূল্যায়ন করে। এ সময় অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ও বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।